Tuesday, December 2, 2014

তাবলীগ জামাত - এ আরেক ফাঁদ...

Source LINK  ( Writer - Shaikh Muzammel Al-hoque )

তাবলীগ জামাত- এ আরেক ফাঁদ...
অহমিকা আর আত্ম-প্রবঞ্চনা দ্বীন ইমান ও আমল ধ্বংসের প্রধান হাতিয়ার যা শয়তান ব্যবহার করে। এই প্রবঞ্চনার শিকার যারা তাদের বৈশিষ্ট হোলঃ

يقولون ما لا يفعلون ويفعلون ما لا يؤمرون-( مسلم/صحيح
যা করে না তাই বলে আর যা করতে বলা হয়নাই তাই করে’’-(মুসলিম/ সহি)।

يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيهِمْ ۖ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُورًا- (النساء/120)
শয়তান কল্যাণের অঙ্গীকার করে, আশা প্রদান করে, অথচ সে শুধুই ধোঁকা দেয়। ( যা ক্ষতিকর সেটাকেই সে উপকারী বলে মনে করায়)’’- আননিসা/১২০।
قال ابن وضاح : وكم من متحبب إلى الله بما يبغضه الله عليه ومتقرب إلى الله بما يبعده منه
ইবনে ওদ্বাহ বলেনঃ কত লোক আছে যারা আল্লাহর মূহাব্বাত কামনা করে অথচ তাদের কাজ আল্লাহকে তাদের উপর রাগান্বিত করে তোলে। আবার অনেক আছে আল্লাহর নৈকট্য কামী অথচ তাদের কাজ আল্লাহ থেকে তাদেরকে দূরেই সরিয়ে রাখে।
কোরআন- হাদিসকে এক পাশে রেখে অনেক শ্রেণীর ধার্মিক, ধর্মীয় গ্রুপ ও ধর্ম-ব্যবসায়ীরা তাদের নিজ নিজ ধ্যান-ধারনা, দলীয় চিন্তাবিদ, তরীকার মুরুব্বী ও সিলসিলার পীরকে ইসলামের রাহবার ও সনদ বলে ধরে নিয়েছেন। যার ফলে ইসলাম এক হওয়া সত্ত্বও তার নানান রূপ দেখা দিয়েছে। এবং এরই ভিত্তিতে সমগ্র উম্মাহ নানান দলে হয়ে পড়েছে।
যে কোরআন আসলো সকলকে এক সারিতে দাঁড়া করতে সেই কেতাবের অনুসারীগণ কেন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো তা আশা করি সহজেই অনুমান করা যায়। শুধু নিজের পক্ষকে জিতানোর উদ্দেশ্যে তর্ক করতে থাকলে কোনই লাভ হবেনা। আসল নকল বুঝে সেমতে নিজেকে মুসলিম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। খামাখাই আন্দাজ নির্ভর হলে কোন লাভ হবেনা।
(১) জ্ঞানীগণ বলেছেন: যদি বলি, কিভাবে কর? উত্তর দাও কেন কর? এরূপ করলে তো প্রশ্নের উত্তর হয়না। অনুরূপ আপনাকে যদি বলি: কিভাবে তাবলীগ করেন? আর আপনি উত্তরে বলেন: রাসুল সঃ বলেছেন: বাল্লেগু আন্নি। তাহলে বলবো তাবলীগ করতে বলা হয়েছে তাতে তো আমাদের কোনই প্রশ্ন নেই। আমাদের প্রশ্ন হোল কিভাবে তাবলীগ করেন তা নিয়ে। এটি বড়ই দুঃখজনক যে, কোন বিশেষ ভুলের কথা বললে যে সব গুণ তাদের আছে সে সবেরই কীর্তন শুরু করবে; যা শয়তানের ধোঁকা ও শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টা মাত্র।
(২) তারা বললেন: আল্লাহ্‌ মারুফ (ভালো কাজ) এর আদেশ আর মুনকার (খারাপ কাজ) থেকে মানুষকে নিষেধ করতে বলেছেন। এতে তো কোনই দ্বিমত নেই। কিন্তু মারুফ আর মুনকার কিভাবে বুঝলেন? সঠিক বুঝলেন, না ভুল? অথবা মারুফকে মুনকার বা মুনকারকেই মারুফ মনে করলেন কিনা?
(৩) কিসসা-কাহিনী কিন্তু কোরআনেও আছে। কিন্তু সেসব কিসসা আল্লাহ্‌র পক্ষ হতে জিবরাঈল আঃ এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌র নবীকে বলা হয়েছে। উদ্দ্যেশ্য আয়াতের ভাবার্থ পরিষ্কার করা। কিন্তু তাবলীগ জামাতের কিতাবগুলির কিসসার উদ্দেশ্য, উৎস, প্রকার ও ধরন ভিন্ন। সব হাওয়া থেকে পাওয়া কল্প-কাহিনী। যার কোন নির্ভরযোগ্য উৎস নেই। অথচ ওসব কিসসাই দীন শিক্ষার মুল উপাদান তাদের! ওসবের উপরেই ভীত গেড়েছে তাদের ঈমান ও আমল। ওসবই তারা শিখে এবং শিখায়। এভাবেই ইসলামের মূল কুরআন-সুন্নাহ থেকে শয়তান তাদেরকে সরিয়ে নিয়েছে। আর তারা নিজেদেরকে সফলকাম মনে করছে!
(৪) তারা ঈমান ও আমলের কথা বলেন। অথচ ইমানের যে ধারনা তাব্লিগীরা পোষণ করেন তা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ইমান নয়। আমল সম্পর্কে তাদের ধারনাও কল্পিত ও বানোয়াট।
এসবই প্রায় বেশীর ভাগ দল ও গ্রুপের অবস্থা। এর কারণ তারাও ব্যক্তি বিশেষের অনুকরণ করেন, দল বিশেষের মডেল অনুসরণ করেন যা ইসলাম অনুমোদন করেনা। এ ক্ষেত্রে হজরত আলী রাঃ যথার্থই বলেছিলেনঃ ‘’ তোমরা ব্যক্তি বিশেষ থেকে দীন গ্রহণ করবে না, কারণ ব্যক্তিরা হয় বিভিন্ন''।আমরা জানি যে মানুষের চিন্তা-ভাবনা, শিক্ষা-সংস্কৃতি, বিদ্যা-বুদ্ধি, অনুধাবন শক্তি, বুঝার ক্ষমতা ও যোগ্যতা এক নয়। আকীদা-বিশ্বাস ও এক নয়। তদুপরি দলীয় আদর্শে মগজ ধোলাই হয়ে থাকলে তো কথাই নেই! তাই নিশ্চিত করেই বলা যায় যে ব্যক্তি পূজাই ইসলামে এতো বিভক্তি এনে দিয়েছে।

নিম্নে তাবলীগ জামাতের কতগুলো বিশেষ বিশেষ ত্রুটি উল্ল্যেখ করা হোল। আশা করি তারা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন এবং সংশোধনের পদক্ষেপ নেবেনঃ

1-তারা কুরআন-হাদিস ব্যতীত ব্যাক্তি বিশেষের মতামত বা (হাওয়া) এর অনুসরণ করেন। রাসুল বলেন সকল প্রকার হওয়ার অনুকরণই শয়তানী। আল্লাহ বলেন, হাওয়ার অনুসারীর চেয়ে পথ ভ্রষ্ট আর কে হতে পারে?
2-কুরআন-হাদিস শিক্ষা করেন না শিক্ষা দেন ও না। অথচ কোরআন হাদিসই দ্বীন। তাদের এই কাজ জর প্রসারিত হবে ইসলাম তত দূরে সোরে যাবে। তাই শয়তান ও তাঁর অনুসারিদের সহজোগিতা এদের জন্যে অবশ্যই থাকবে।
3-কিসসা কাহিনী, স্বপ্ন, রুহানী ফয়েজ, বুজুর্গী, ফানাফিল্লাহ ইত্যাদি কল্পিত ডগমায় বিশ্বাস করেন।
4-তাওহীদ ও আকীদা ইসলামের মূল অথচ এর শিক্ষাকে নিরুৎসাহিত করেন। যারা তাওহীদ শেখে তাদেরকে তারা ওহাবী বলে গালি দেয়।
5-আলেম ওলামাদেরকে ঘৃণার চোখে দেখেন, অথচ প্রকৃত আলেমগণই অন্ধকারের আলো।
6-ফাজায়েল (mane অতিরিক্ত) আমলের উপরই তারা বেশী গুরুত্ব দেন অথচ ফারায়েজ (অতি গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় সমূহ) কে অবহেলা করেন।
7-ইবাদাতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন শিক্ষাতে মোটেও নয়। বড় ফরজ হল ইলেম শিক্ষা করা অথচ তারা ছোট্ট একটি আমলকে প্রাধান্য দেন এলেম শিক্ষার উপরে। না জেনে ইমান আনলে ও আমল করলে কোনই ফায়দা নেই তা আল্লাহ্‌র রাসুল সঃ বলে গেছেন।
8-তারা অনেক শিরক-বিদআতের জন্ম দাতা ও পৃষ্ঠপোষক। শির বেদাত কি তারা জান্তেও রাজী নন। যেন শয়তান ওদিক থেকে তাঁদের মুখ ফিরিয়ে দিয়েছে।
9-মুরুব্বিদের অন্ধ অনুকরণ করেন। তাদের কথাকে তারা ওহীর মত মনে করেন। কোরআনের অহীর গুরুত্ব না থাকেল বুজুর্গের কথার দারুন মুল্য আছে।
10-খেয়ালি কেচ্ছা ও অলৌকিক বিষয়ে তারা অধিক বিশ্বাস করেন। শয়তান আড়ালে থেকে অনেক কারসাজি দেখাতে পারে তা কখনো তারা বুঝতে চাননা। শয়তান যে তাঁদের কে নিয়ে খেলতে পারে তা তারা ম্নেই করেনা।
11-শুধু ইবাদাতের জন্যে মসজিদের দিকে আহবান করেন। কি ভুল কি শুদ্ধ তা মোটেও তয়াক্কা করেন না। কাউকে ভুল,অশুদ্ধ ও গুনাহ থেকে নিশেধ করেন না। এ জাতীয় দাওয়াতি কাজের জন্যেই আল্লাহ ইয়াহুদিদেরকে ধংস করেছেন।
12-তাদের মুরুব্বিরা বলেছেনঃ নবীগন যে সাগরের তীরে দাঁড়িয়ে হা করে তাকিয়ে থেকেছেন আমরা তাতে সাঁতার কাটছি- নাউজুবিল্লাহ মিনহুম। তারা অহ্মিকার এমন এক স্তরে পৌঁছেছেন যা শয়তানকেও হার মানায়।
13- তাঁদের বুজুর্গরা বলেছেনঃ যে বেহেশতে নামাজ নাই সে বেহেশত দিয়ে কি হবে? মানে বেহেস্তের চেয়ে তাঁর নামাজ বড়। আল্লাহ যা চান তা তারা চান। নবীরা যা কামনা করেন নাই তারা তা করেন।
14-আল্লাহ্‌ বলেনঃ হে নবী যা তোমার উপর নাজেল হয়েছে তাই প্রচার কর(মায়েদাহ-৬৭)। তোমার উপর যা নাজেল হয়েছে তাই হক (রা’আদ-১)। এই হকের বাইরে যা সবই গোমরাহি (ইউনুস-৩২)। অথচ তারা এই হকের বাইরে থেকেই দীন শেখেন এবং প্রচার করেন! বুঝতে বাকী থাকেনা তারা দ্বীন প্রচার করেন না শয়তানের ওহির বিস্তারে কাজ করেন??

No comments:

Post a Comment