Saturday, June 28, 2014

ইরাকে জিহাদীদের বিস্ময়কর যুদ্ধজয় ও আতংক সাম্রাজ্যবাদি শিবিরে

লেখক - ফিরোজ মাহবুব কামাল LINK

বিস্ময়কর যুদ্ধজয়

রীতিমত ঝড়ের বেগে এগিয়েছে দা্ওলাতে ইসলামিয়া ইরাক ও শাম (ইসলামিক স্টেট অব ইরাক এ্যান্ড সিরিয়া -সংক্ষেপে আইএসআইএস)এর মুজাহিদগণ। তাদের মাত্র ৮০০জন যোদ্ধা ইরাকী সেনাবাহিনীর ৩০ হাজার নিয়মিত সৈন্যকে পরাজিত করে দখল করে নিয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মোসল। মোসলে মোজাহিদের যুদ্ধটি ছিল ৩৭ জন ইরাকী সৈন্যের বিরুদ্ধে এক জন মোজাহিদের। কিন্তু সেখানে যুদ্ধ হয়নি। যুদ্ধ না লড়েই সরকারি ইরাকী বাহিনী ভয়ে পালিয়েছে। তারা পলায়ন করেছে সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের জন্মস্থান তিকরিত শহর থেকে। পলায়ন করেছে কিরকুক শহর থেকেও। তবে কিরকুকে মোজাহিদগণ পৌঁছার আগেই সুযোগসন্ধানি কুর্দিরা শহরটি দখল করে নিয়েছে। তেলসমৃদ্ধ কিরকুকের উপর বিচ্ছিন্নবাদি কুর্দিদের বহুদিনের দাবী। তারা শহরটিকে কুর্দিস্থানে রাজধানি বানাতে চায়। এবার সুযোগ বুঝে দখল করে নিল। তবে এর ফলে দা্ওলাতে ইসলামিয়ার সাথে কুর্দিদের যুদ্ধটিও ভয়ানক রূপ নিবে। বর্তমানে যুদ্ধ হচ্ছে বাগদাদ শহর থেকে মাত্র ৪০ মাইল দূরের বাকুবা শহরের দখল নিয়ে। প্রচন্ড যুদ্ধ শুরু হয়েছে কিরকুকের দখল নিয়ে। যুদ্ধ হচ্ছে স্ট্রাটেজীক শহর তালাওয়ারের চারপাশে। সেখানে রয়েছে বিমান বন্দর। যুদ্ধ চলছে বেয়জী শহরের চারপাশে। মুজাহিদদের দাবি তারা শহরটি দখল করে নিয়েছে। সেখানে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ তেলশোধনাগর -ইরাকের শতকরা ৪০ ভাগ তেল আসে এই তেলশোধনাগার থেকে।


মুজাহিদগণ যেভাবে বিদ্যুৎ বেগে একের পর এক শহর দখল করে সামনে এগিয়েছে তাতে আতংক বেড়েছে সমগ্র পাশ্চাত্য মহলে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন গত ১৮ই জুন তারিখে পার্লামেন্টে বলেছেন ইসলামিক স্টেট অব ইরাক এ্যান্ড সিরিয়ার এর বিজয় ব্রিটিশ নিরাপত্তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় হুমকি। একই ভয় মার্কিনীদের। তাদের ভয়, মুজাহিদদের অগ্রগতি রুখার সামর্থ ইরাকী সেনাবাহিনীর নেই। তারা যুদ্ধজয় দূরে থাক, যুদ্ধ লড়তেই রাজী নয়। অথচ মার্কিন বাহিনী যখন ইরাক ছাড়ে তখন বলেছিল, ইরাকী সেনাবাহিনী নিজেরাই দেশের নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট। দখলদার মার্কিনীগণ বহু বছর ধরে বহু বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে দুই লাখের বেশী সৈন্য নিয়ে সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছিল। কিন্তু সেটি যে আদৌ কোন সেনা বাহিনীই নয় –সেটিই রণভঙ্গ দিয়ে তারা প্রমাণ করলো। মার্কিন যুক্তরাষ্টসহ পাশ্চাত্যের শক্তিবর্গ চায়, মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিশালী সেনাবাহিনী থাকবে একমাত্র ইসরাইলের, কোন মুসলিম দেশের নয়। মার্কিনী যুক্তরাষ্ট তাই চায়নি, ইরাক কোন শক্তিশালী সেনাবাহিনীর অধিকারি হোক। সেটিই এখন প্রমাণিত হলো।

যুদ্ধের অভিজ্ঞতার তো আসে যুদ্ধলড়ার মধ্য দিয়ে। ইরানের সাথে ৮ বছর যুদ্ধ লড়ে ইরাকী সেনাবাহিনী বিপুল দক্ষতা অর্জন করেছিল। কিন্তু মার্কিনীগণ ইরাক দখলে নেয়ার প্রথম সুযোগেই সে অভিজ্ঞ সেনাবাহিনীর বিলুপ্তি ঘোষণা করে। ইরাকের জন্য তারা যেমন শক্তিশালী সেনাবাহিনী চায়নি, তেমনি বিমান বাহিনী বা নৌবাহিনীও চায়নি। মার্কিনীদের হাতে গড়া এ ইরাকী সেনাবাহিনীর কোন যুদ্ধ-অভিজ্ঞতা নেই। অভিজ্ঞতা যা আছে তা হলো অফিস-আদালত, মন্ত্রীদের ঘরবাড়ি ও বিদেশী দূতাবাস পাহারা দেয়ার। সে সাথে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে সাধারণ মানুষের দেহতল্লাশি করার। বিগত দশবছর যাবৎ ইরাকের সেনাবাহিনী সে কাজগুলিই দিবারাত্র করেছে। ফলে মোসল, তিকরিত বা কিরকুকে যখনই তারা যুদ্ধের পদধ্বনি শুনেছে তখনই গায়ের পোষাক, বুট ও অস্ত্র ফেলে রণাঙ্গণ থেকে দ্রুত পলায়ন করেছে। তাদের পলায়নের ফলে যুদ্ধ পৌঁছে গেছে বাগদাদের দোরগড়ায়। ভয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলি এখন বাগদাদ থেকে দ্রুত লোক সরাচ্ছে। সারা পৃথিবীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় দূতাবাসটি হলো বাগদাদে। সেখানে কাজ করে সাড়ে ৫ হাজার মার্কিনী। তাদের পাহার দিতে ওবামা সরকার মার্কিন নৈ-বাহিনীর কয়েক শত সৈন্য পাঠিয়েছে। অপর দিকে ইরাকী প্রধানমন্ত্রি নূরী মালেকী নিজ সৈন্যদের উপর ভরসা না করে রণাঙ্গণে শিয়া মিলিশিয়াদের নামাচ্ছে।


কেন আতংক পাশ্চাত্য শিবিরে?

জিহাদীদের এত দ্রুত যুদ্ধজয়ের ব্যাখ্যা সামরিক বা রাজনৈতিক ভাবে দেয়া সম্ভব নয়। এমন যুদ্ধজয় চোখে আঙুল দিয়ে যা দেখিয়ে দেয় তা হলো, জনবল, অস্ত্রবল ও অর্থবলের বাইরেও মহাবিস্ময়কর বল আছে। যুদ্ধজয়ে সেটিই মূল ভূমিকা রাখে। সে মহাশক্তির বলে মানব ইতিহাসে বহু নিঃস্ব ও ক্ষুদ্র জনশক্তিও বড় বড় যুদ্ধজয় করেছে। এমনকি বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয়েছে। ইসলামের মুলশক্তি তেলগ্যাস, সামরিক শক্তি বা জনশক্তি নয়। সেটি মহান আল্লাহতায়ালার শক্তি। এটি ঈমানের এতটাই বুনিয়াদি বিষয় যে, এরূপ বিশ্বাস না থাকাটাই শিরক। এমন শিরকের গুনাহ নিয়ে কোন ব্যক্তিই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে না। মুসলমানগণই যখনই আল্লাহর বাহিনীতে পরিণত হয় তখনই তারা অপ্রতিরোধ্য শক্তিকে পরিণত হয়। তাদের জীবনে তখন লাগাতর বিজয়ও শুরু হয়। কারণ, সে বাহিনীর বিজয়ে মহান আল্লাহতায়ালা নিজেই দায়িত্ব নিয়ে নেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা সে সত্যটি বার বার বর্ণনা করেছেন।

No comments:

Post a Comment